ফুটবল

আলভেসের জায়গা নিতে পারি, মেসিকে বোঝালেন তিনি

আগের দিনই করিম বেনজেমা রিয়াল মাদ্রিদকে দ্বিতীয় স্থানে টেনে তুলেছিলেন। বার্সেলোনাকে নামিয়ে দিয়েছিলেন তৃতীয় স্থানে।

বার্সেলোনা তৃতীয় স্থানে থাকল মেরেকেটে এক দিন। রিয়াল সোসিয়েদাদকে ৬-১ গোলে করে বিধ্বস্ত করে আবারও পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বার্সা। জোড়া গোল করেছেন লিওনেল মেসি ও ডাচ রাইটব্যাক সের্হিনিও দেস্ত। একটি করে গোল করেছেন দুই ফরাসি ফরোয়ার্ড আতোয়ান গ্রিজমান ও ওসমানে দেম্বেলে।

লিগে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে মাঠে নেমেছিল বার্সেলোনা। ম্যাচ শেষে সে রেকর্ডটাই দাঁড়াল ১৮ ম্যাচে। ৪-৩-৩ ছকে দলকে মাঠে নামানো কোচ রোনালদো কোমান সম্ভাব্য সবচেয়ে শক্তিশালী দলটাই নির্বাচন করেছিলেন এই ম্যাচের জন্য। গোলবারের নিচে যথারীতি টের স্টেগেন, সামনে সেন্টারব্যাক হিসেবে অস্কার মিঙ্গেসা ও ক্লেমঁ লংলে, দুই পাশে দুই ফুলব্যাক সের্হিনিও দেস্ত ও জর্দি আলবা। তিনজন মিডফিল্ডারের জায়গায় সের্হিও বুসকেতসকে মাঝে রেখে দুপাশে খেলেছেন ডাচ মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ও পেদ্রি। ওপরে মেসির দুপাশে গ্রিজমান ও দেম্বেলে। নিজেদের মাঠে এই বার্সাকেই আটকে রাখতে পারেনি সোসিয়েদাদ।

জোড়া গোল করেছেন দেস্ত।

জোড়া গোল করেছেন দেস্ত।

ম্যাচের ১১ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বার্সেলোনা। লেফটব্যাক জর্দি আলবার পাস ধরে গোল বরাবর বক্সের বাইরে থেকে শট করেছিলেন মেসি। বক্সের বাইরে থেকে গত ম্যাচেই দুই গোল করা মেসি এই যাত্রায় গোল করতে পারেননি। বার্সা যেহেতু প্রথম থেকেই পেছন থেকে বল বের করে আক্রমণ গঠন করতে পছন্দ করে, তাই রিয়াল সোসিয়েদাদের স্ট্রাইকাররা প্রেস করে খেলতে চাইছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রেসিং গলে বনেশ ভালোভাবেই বল বের করে আনছিল বার্সার রক্ষণভাগ।

২৪ মিনিটে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সাবেক সুইডিশ স্ট্রাইকার আলেক্সান্দার ইসাকের শট আটকে দেন টের স্টেগেন। ৩৭ মিনিটে আলবা, মেসি, দেম্বেলে ও গ্রিজমানের যৌথ উদ্যোগে প্রথম গোল পেয়ে যায় বার্সেলোনা। মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সে দেম্বেলের উদ্দেশ্যে পাস বাড়ান স্প্যানিশ লেফটব্যাক আলবা, দেম্বেলের শোট সোসিয়েদাদের গোলকিপার অ্যালেক্স রেমিরো আটকে দিলেও বল চলে যায় ফাঁকা দাঁড়িয়ে থাকা গ্রিজমানের পায়ে। সেখান থেকে গোল করতে সমস্যা হয়নি তাঁর। লিগে এটা গ্রিজমানের অষ্টম গোল।

জোড়া গোল এসেছে মেসির পা থেকেও।

জোড়া গোল এসেছে মেসির পা থেকেও।

প্রথম গোলের ঠিক পরেই সোসিয়েদাদ সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়ে যায়। নিরন্তর প্রেস করার সুবিধা আরেকটু হলেই পেয়ে যাচ্ছিল তাঁরা। তবে ইসাকের সেই শট আবারও রক্ষা করে টের স্টেগেন।

বার্সার দ্বিতীয় গোলেও আছে মেসির ভূমিকা। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে ডান প্রান্তে উঠে যাওয়া ডাচ রাইটব্যাক সের্হিনিও দেস্তকে পাস দেন দলের অধিনায়ক। ডান পায়ের জোরালো শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বার্সা। মৌসুমে এটাই দেস্তের প্রথম লিগ গোল। ২-০ স্কোরলাইন নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করে বার্সা।

দুই ফুলব্যাক যে এই ম্যাচে বার্সেলোনার হয়ে কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, সেটাই ফুটে উঠেছে তৃতীয় গোলে। লেফটব্যাক আলবার পাস ধরে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ও বার্সার তৃতীয় গোল করেন রাইটব্যাক দেস্ত, ৫৩ মিনিটে।

যথারীতি দুরন্ত ফর্মে ছিলেন মেসি।

যথারীতি দুরন্ত ফর্মে ছিলেন মেসি।

তিন মিনিট পরই আবারও সেই পুরোনো দিনের মতো মেসি-বুসকেতসের ঝলক দেখা গেল মাঠে। বুসকেতসের দুর্দান্ত একটা লব বল ধরে ৫৬ মিনিটে নিজের প্রথম ও দলের চতুর্থ গোল করেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। ৬২ মিনিটে বাইসাইকেল কিকে নিজের প্রথম গোল করেই ফেলেছিলেন দেম্বেলে। কিন্তু বল সরাসরি চলে যায় সোসিয়েদাদ গোলকিপারের হাতে। ৬৬ মিনিটেও আরেকটা সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু এবার বাদ সাধে অফসাইড।

কিন্তু গোল করার জন্য এই ফরাসি ফরোয়ার্ড যে কতটা মুখিয়ে ছিলেন, সেটা বোঝা গেছে ৭১ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে এসে বাঁ পায়ের শটে দলকে আরও এগিয়ে দেন দেম্বেলে। ৭৬ মিনিটে গোল করে ব্যবধানটা সামান্য কমান সোসিয়েদাদের স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আন্দের বারেনেৎসিয়া। ৯০ মিনিটে আলবার আরেকটা পাস ধরে নিজের দ্বিতীয় গোল করে ফেলেন মেসি। ৬-১ গোলের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা।

মৌসুমের শুরুতে আয়াক্স থেকে যখন বার্সায় নাম লিখিয়েছিলেন, রাইটব্যাক দেস্ত আশা করেছিলেন, বার্সার কিংবদন্তি সাবেক রাইটব্যাক দানি আলভেসের মতো মেসির সঙ্গে দুরন্ত জুটি গড়ে তুলতে চান তিনি। বার্সায় নিতে চান আলভেসের জায়গা। এই ম্যাচ যেন সেই বার্তাই দিল, দেখাল, ফর্মে থাকলে দেস্ত কী কী করতে পারেন মেসির সঙ্গে। দেস্তের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরেক ফুলব্যাক আলবাও ছিলেন দুর্দান্ত। নিজে গোল করতে পারেননি তো কী হয়েছে? যেভাবে দলের তিনটি গোল বানিয়ে দিয়েছেন, মনে হয়েছে বয়স বাড়লেও ধার কমেনি এই স্প্যানিশ তারকার।

সম্পর্কিত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button