রাজনীতি

কলেজ ছাত্রলীগ কমিটির আহ্বায়ক ‘মোবাইল চোর’!

সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈমকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে পদবঞ্চিতরা। তার বিরুদ্ধে মোবাইল চুরি, শিবির সম্পৃক্ততা ও মাদকাসক্তির অভিযোগও তুলেছেন তারা।

পদবঞ্চিত মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী মায়মুন উদ্দিন মামুন বলেন, ‘আমরা এই বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটি মানি না। যাদের ত্যাগ, শ্রম ও রক্তের বিনিময়ে কলেজ ক্যাম্পাস আজ শিবিরমুক্ত হয়েছে তাদের বাদ দিয়ে সাবেক শিবির নেতা, মোবাইল চোর, মাদকাসক্ত ও ইভটিজারকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। যার ছাত্রত্ব নেই, বয়স নেই। আমরা এই তাকেসহ এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।’

মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর টাকার বিনিময়ে ত্যাগী ও প্রকৃত নেতাকর্মীদের পদবঞ্চিত করে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে অছাত্র, শিবির কর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছে।’

প্রায় পাঁচ বছর আগে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ‘মোবাইল ফোন চুরির’ ঘটনায় গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন কাজী নাঈম নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী। এ ছাড়া মাস দুয়েক আগে কলেজে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত ছাত্রলীগের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলতে দেখা গেছে নাঈমকে। কলেজের সিসিটিভি ফুটেজে সেই দৃশ্য ধরা পড়ে।

দীর্ঘ তিন যুগ পর নগরে সরকারি এই কলেজে হঠাৎ ঘোষিত নতুন কমিটির আহ্বায়কের পদ পেয়েছেন অভিযুক্ত সেই কাজী নাঈম। একই কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়কের পদে আসা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি ও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ। আবার কমিটিতে সদস্য পদ পাওয়া সাইফুল ইসলাম এক বছর আগে বিয়ে করেছেন। নগরের চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি হয়েছেন সাদ্দাম হোসেন ইভান। প্রায় দুই বছর আগে বিয়ে করা ইভানের বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে।

শুধু এই কয়েকজনই নন, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের আওতাধীন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ এবং ছয়টি থানা ও ছয়টি ওয়ার্ডে ঘোষিত নতুন কমিটিতে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত, অছাত্র, বিবাহিত এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি পেয়েছেন। গত বুধবার রাতে ও পরদিন বৃহস্পতিবার এসব কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর স্বাক্ষরিত এসব কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পরই রাতে ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্রলীগের ত্যাগী-পদবঞ্চিতরা। আবার কমিটিতে পদ পেলেও ‘অবমূল্যায়ন’ করায় ক্ষুব্ধ অনেকে।

প্রসঙ্গত, মহানগর ছাত্রলীগ গত বুধবার সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ; বাকলিয়া, হালিশহর, চকবাজার, পাহাড়তলী, বায়েজিদ থানা এবং পশ্চিম বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া, চকবাজার, দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া ও রামপুর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের নতুন কমিটির (কোনোটি পূর্ণাঙ্গ আবার কোনোটি আংশিক) অনুমোদন দেয়। এরপর বৃহস্পতিবার অনুমোদন দেওয়া হয় পাঁচলাইশ থানা কমিটি।

এদিকে কমিটি দিয়েই নগর কমিটির শীর্ষ দুই নেতা ইমু ও দস্তগীর গত বুধবার ঢাকায় চলে গেছেন। ঘোষিত কমিটিগুলোতে অভিযুক্তদের পদপ্রাপ্তির ব্যাপারে জানতে গত বৃহস্পতিবার কয়েকবার ওই দুই নেতার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর মহানগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি দেওয়া হয়। আর কেন্দ্র থেকে তা অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৪ সালের জুন মাসে। এরপর সাত বছরেও আর কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। গত বুধবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ করেই ১৩ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। খোদ নগর ছাত্রলীগের বেশির ভাগ নেতাই এসব নতুন কমিটির বিরুদ্ধে।

মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগের বিষয়ে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের ৪১ সদস্যের নতুন কমিটির আহ্বায়ক কাজী নাঈম  বলেন, ‘তেমন ঘটনা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের ছাত্রলীগের গ্রুপিংয়ের রোষানলের শিকার হয়েছি আমি। যে তারিখের কথা বলা হচ্ছে, সেদিন আমাকে মারধর করে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছিল ওরা (প্রতিপক্ষের কর্মীরা)। এটা মোবাইল চুরির ঘটনা ছিল না। তারা এখন মোবাইল চুরির ঘটনা সাজাচ্ছে।’

ছাত্রত্ব না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নাঈম বলেন, ‘আমি ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করেছি। ২০১০-১১ সেশনে কলেজে অনার্স কোর্সে ভর্তি হলেও সেশনজটের কারণে পাস করতে আট বছর লেগেছে। এখন মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।’

মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মায়মুন উদ্দিন মামুন বলেন, ‘তিন যুগ পর ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর শিবির-অধ্যুষিত চট্টগ্রাম নগরের বড় দুই সরকারি কলেজে (হাজী মুহাম্মদ মহসিন ও চট্টগ্রাম কলেজ) তাদের বিতাড়িত করে আমরা (ছাত্রলীগ) ক্যাম্পাসে ঢুকি। আমাদের কলেজে যে কমিটি দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে আহ্বায়ককে মোবাইল চুরির ঘটনায় গণপিটুনি দিয়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আমরা কাঙ্ক্ষিত পদ পাইনি। ছয় যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে আমরা চারজন নতুন কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছি।’

দুই যুগের বেশি সময় ধরে ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকা চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজে ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রলীগ। শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাসে এখন সক্রিয় একমাত্র ছাত্রলীগ।

সম্পর্কিত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button