৪৯ বছর আগে আজকের দিনে পুরান ঢাকার বি কে গাঙ্গুলী লেনের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানকে। এরপর আর তাঁর খোঁজ মেলেনি। আজ তাঁর ৫০তম শহীদ দিবস। দিনটি ঘিরে কথা হয় তাঁর স্ত্রী বরেণ্য অভিনয়শিল্পী কোহিনূর আক্তার সুচন্দার সঙ্গে। বললেন সেদিনের কথাসহ আরও অনেক কিছু …
প্রতিদিনই তো কোনো না কোনোভাবে জহির রায়হানের কথা মনে হয়। কিন্তু এই দিনে আপনার স্মৃতিতে তিনি কীভাবে আসেন?
নানাভাবে আমার স্মৃতিতে জহির রায়হানের বিচরণ। প্রথম পরিচয়ের লগ্ন থেকে শেষযাত্রা পর্যন্ত—সবকিছু আমার মনে পড়ে। বসে বসে কত কি ভাবি, কত কি স্মৃতিচারণা করি—কোনোটা ভালো, কোনোটা মন্দ। তাঁর রাজনীতি, চলচ্চিত্র, সাহিত্য, পারিবারিক জীবন সবই মনের মধ্যে উঁকি দেয়। কাজ করতে করতেই আমাদের ভালোবাসার জন্ম হলো। যদিও জহিরের সঙ্গে সাংসারিক ও পারিবারিক জীবনের স্মৃতি আমি খুব একটা খুঁজে পাই না। পুরাই কাজপাগল একজন মানুষ ছিল। সারাক্ষণ কাজের মধ্যেই ডুবে থাকত। পারিবারিক জীবন যে একটা জীবন; স্ত্রী, সংসার, সন্তানদেরও যে সময় দেওয়ার দরকার, সেইটা আমি কিন্তু তাঁর কাছ থেকে সেভাবে পাইনি। এ নিয়ে অনেক অপূর্ণতা থাকলেও তবে এসব নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। জহির রায়হান অনেক গুণের মানুষ, তবে বাবা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব থাকে, স্বামী হিসেবে স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য—সেটা কিন্তু জহির ঠিকঠাকভাবে পালন করতে পারেনি। সাধারণ মানুষ হলে বিষয়টাকে আমি অন্যভাবে নিতাম। সবকিছু ভেবেই আমি ত্যাগ স্বীকার করেছি। জহির তো আমার একার না, দেশের সবার কথা ভাবত। পোড় খাওয়া মানুষ, ঘুণে ধরা সমাজ, এসবের কথাই সব সময় ভেবেছে—এসব ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিতাম। আমিও খুব ব্যস্ত ছিলাম। দেখা যেত, আমি যখন বাসায় ফিরতাম জহির তখন কাজে বের হতো। পড়াশোনা করে যতটা জেনেছি, গুণী মানুষদের জীবনটা বুঝি এ রকমই হয়। তাঁরা একটু বোহিমিয়ান স্বভাবের। তাই আমার কোনো রাগ, ক্ষোভ কিছুই ছিল না।
আপনি ত্যাগের কথা বলছিলেন, আপনার কাজে কি তিনি কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতেন?
একদমই না। আমাকে অনেক বেশি উৎসাহ দিত। কখনো বলেনি, ‘তুমি এই কাজ করতে পারবে না বা করা উচিত না।’ বরং আমাকে এও বলেছে, ‘তোমাকে যতটুকু বুঝেছি, পরিচালনা করলে তুমি ভালো করতে পারবে।’ আমি বলেছিলাম, আরও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি, তারপর না হয় দেখা যাবে। যুদ্ধের আগে সে বলেছিল, আমি একটা চিত্রনাট্য করে দেব, তুমি ডিরেকশন দেবে। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি।

১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি আসলে কী হয়েছিল?
এ তো অনেক বড় ঘটনা। অল্প সময়ে বলা সম্ভবও না। তারপরও যদি বলতে হয়, পুরান ঢাকার বি কে গাঙ্গুলী লেনের শ্বশুরবাড়ি আমাদের বাসা। সকালের নাশতা বানাচ্ছি। এমন সময় বাসার কাজের ছেলে এসে বলল, ‘স্যার, বাসার নিচে আর্মির পোশাক পরা একজন লোক এসেছেন। আপনাকে নিচে যেতে বলেছেন।’ জহির বলল, ‘ঠিক আছে। বলো, আমি আসতেছি।’ না খেয়ে নিচে নেমে গেল।
পুলিশ নাকি আর্মির লোক, আপনি কি দেখেছিলেন?
আমি দেখিনি। পুলিশ নাকি আর্মির লোক, তা বলতে পারছি না। সকাল ৯টা, সাড়ে ৯টা কি ১০টা হবে। নাশতা রেডি করছিলাম। ‘সময় নেই, এখন যাই’ বলে নেমে গেল। নেমে গিয়ে আবার ফিরে এল। হনহন করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে এসে বলল, ‘আমার তো গাড়িতে পেট্রল নাই, পকেটে টাকা নাই। টাকা দাও।’ চলে যাওয়ার সময় আমি বললাম, পায়ের মোজাটা ৪-৫ দিন ধরে পরছ, এটা চেঞ্জ করো। জহির বলল, ‘পরে ফেলছি যেহেতু এখন চেঞ্জ করার সময় নাই। আমি ফিরে এলে তুমি ধুয়ে দিয়ো।’ বলেই, টাকা নিয়ে দৌড়ে চলে গেল।
আপনার সঙ্গে জহির রায়হানের শেষ কথাটা কী হয়েছিল?
‘আমার তো গাড়িতে পেট্রল নাই। পকেটে টাকা নাই, টাকা দাও।’ এটাই আমাদের শেষ কথা।

জহির রায়হানের ওভাবে বের হয়ে যাওয়াটা শেষ যাওয়া হবে ভেবেছিলেন?
বাসা থেকে বের হওয়ার পর দুপুরের দিকে বাসার ল্যান্ডফোনে একটা ফোন এল। জানা গেল, এফডিসি থেকে সেই ফোন এসেছে। জহির রায়হানকে খুঁজছিল। যখন বলা হলো, জহির রায়হান সাহেব নেই। তখন বলল, ‘তাহলে ম্যাডামকে একটু দেন।’ তখন আমি কথা বললাম। কে যে কথা বলছিল, মনে নেই। আমাকে বলা হলো, ‘বোম্বে থেকে কিছু শিল্পীসহ কলাকুশলীরা এসেছেন। এফডিসিতে বিকেলে একটা অনুষ্ঠান আছে। জহির রায়হান ভাই যেহেতু নাই, আপনাকে কিন্তু আসতেই হবে।’ বাসার সবাইও বলছিল, জহির যেহেতু যেতে পারবে না, আমাকে যেতে। আমি গেলাম। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি, সবাই চুপচাপ, নীরব, নিস্তব্ধ। বললাম, সবাই এত চুপচাপ কেন? জহির কোথায়? শাহরিয়ার কবীর বলল, ‘মেজদা এখনো আসেননি।’
এরপর কী করলেন?
শুনেছিলাম জহিরকে মিরপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ফোন করলাম সেখানে। ওপাশ থেকে কে ধরলেন, বলতে পারলাম না। শুধু জানতে চাইলাম, আমি জহির রায়হান সাহেবের স্ত্রী বলছি। তাঁর তো কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। তাঁকে কি একটু দেওয়া যাবে? কথা বলতে চাই। আমাকে বলা হলো, ‘তাঁকে এখন দেওয়া যাবে না।’ বলেই ফোনটা রেখে দিল। ঘণ্টাখানেক পর আবার ফোন করলাম। এবার বলল, ‘আমরা সবাই ব্যস্ত। জহির রায়হান সাহেবকে এখন ফোন দেওয়া যাবে না।’ এবার এই কথা বলে ফোন রেখে দিল। একটু পর আবার ফোন দিলাম। তখন বলল, ‘একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। এখানে গোলাগুলি হয়েছে। জহির রায়হান সাহেবকে তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ তখন সম্ভবত রাত ৯টা হবে। আমার সমস্ত শক্তি কমে যাচ্ছিল। রাত পার হলো। দিন যাচ্ছে। জহিরের কোনো খবর পাচ্ছি না। এর মধ্যে খবর পেলাম, মিরপুরে গোলাগুলি হয়েছে। কিছু লোক মারা গেছে। এভাবে ৭ দিন, ১০ দিন পার। আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না, জহির গোলাগুলিতে মরতে পারে বা স্বাধীন দেশে জহির হারিয়ে যেতে পারে! এরপর পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা বলে জহিরের ছোট ভাই জাকারিয়া হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ওখানে তাঁবু টানানো ছিল। দেখা হলো একজন আর্মি পারসনের সঙ্গে, যত দূর মনে পড়ছে, তাঁর নাম মেজর মঈন। তিনি বললেন, ‘আমরা মিরপুরের ওখানে ছিলাম। ওখানে গোলাগুলি হয়েছে। তারপর থেকে জহির রায়হান সাহেবকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এরপর বাসায় চলে এলাম। সবাই মিলে কদিন পর মিরপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পুলিশের সহযোগিতা চাইলাম। তখনো মনের মধ্যে আশা আছে। মন বলছিল, জহিরকে নিশ্চয় পাব। আমরা গেলাম মিরপুর থানায়। পুলিশ দুজন বিহারিকে ধরে আনল। আমাদের সামনে চড়-থাপ্পড় মারল। তারা বলল, সেদিন বিহারিদের সঙ্গে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়েছিল। অনেক মানুষ মারা যায়। পুলিশ তাদের নিয়েই ঘটনাস্থলে গেল। কয়েকটি কলাগাছের আশপাশের মাটি খোঁড়া হয়। অনেকগুলো মৃতদেহ দেখাল। এরপর পুলিশ একটি কুয়ার কাছে নিয়ে গেল। মৃতদেহে ভর্তি ছিল। ভয় পেলাম। বিয়ের সময় আমি জহিরকে ওমেগা ঘড়ি উপহার দিয়েছিলাম। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার দেওয়া কার্ডিগ্যান পরনে ছিল। ভেবেছিলাম, ওসব দেখলেও তো অবশ্যই চিনব। কিন্তু কোথাও জহির রায়হানকে খুঁজে পেলাম না।

এরপর আশা কি ছেড়ে দিয়েছিলেন?
পরিবারের সবাই মিলে খুঁজছি। সবার মন খারাপ। বাসায় এসে বসে থাকি, শুয়ে থাকি। কান পেতে থাকতাম, জহির কখন আসবে। জহিরের একটা অভ্যাস ছিল, সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে উঠত, দৌড়ে নামত। জুতার আওয়াজ কানে আসত। আমাদের রুমটা ছিল সিঁড়ির সঙ্গে। দোতলায় থাকতাম। ভাবতাম, এই বুঝি জহিরের পায়ের জুতার শব্দটা পাব।
কবে নিশ্চিত হলেন, জহির রায়হানের খোঁজ আর পাবেন না?
এক মাস পার হয়ে যাওয়ার পর নিশ্চিত হয়ে যাই, আর বুঝি জহিরকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
জহির রায়হানের সঙ্গে আপনার পরিচয় কীভাবে হয়েছিল?
১৯৬৬ সালের কথা। আমি ‘কাগজের নৌকা’ ছবির নায়িকা। শুটিং শেষ হলেও ছবিটি তখনো মুক্তি পায়নি। মুক্তির কিছুদিন আগে জহির রায়হান আমাদের গেন্ডারিয়ার বাড়ি এসে হাজির। তখন আমরা সরাসরি সিনেমার বিষয়ে কথা বলতাম না। বাবা-মায়েরা বলতেন। আমি ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি, সোফায় তিনজন লোক বসা। একজনের হাতের আঙুলে চাবির রিং। পরিচয় হলো, জানলাম, তিনিই জহির রায়হান। শুরুর জীবনে যখন শুটিং করতাম, তখনই জানতে পেরেছি, জহির রায়হান নামকরা পরিচালক। ‘বেহুলা’ ছবিতে নায়িকা বানাতে তিনি আমাদের বাসায় এসেছিলেন।
আপনার সঙ্গে জহির রায়হানের প্রথম কী কথা হয়?
আমি এ রকম ছবি বানাব। নায়িকা হিসেবে আপনাকে নিতে চাই।
কীভাবে তিনি আপনার খোঁজ পেলেন?
আমি অবশ্য এটা জিজ্ঞেস করিনি। তবে শুনেছিলাম, সে সময় ‘চিত্রালী’ ম্যাগাজিনে ‘কাগজের নৌকা’ ছবির শুটিংয়ের ছবি দেখে তাঁর আমাকে পছন্দ হয়। ‘বেহুলা’ নামের সেই ছবিতে আমি ও রাজ্জাক সাহেব অভিনয় করেছিলাম।
আপনারা সম্পর্কের মায়াজালে জড়ালেন কীভাবে?
শুটিংয়ের সময় জহির রায়হান সাহেবের ক্যামেরায় লুক থ্রো-তে বুঝতে পারতাম তিনি আমার প্রতি দুর্বল। ‘বেহুলা’ ছবির সময়ই তা টের পাই। তাঁর চোখের ভাষা বুঝতে পারতাম। ‘আনোয়ারা’ ছবির শুটিংয়ে জহির রায়হান সাহেব তাঁকে বিয়ের কথা বলেন। আমরা তখন এফডিসিতে ‘আনোয়ারা’ ছবির স্ক্রিপ্ট নিয়ে কথা বলছিলাম। আমি বিয়ে করব না বলতে তিনি অভিমানে বললেন, ছবি বানানোই ছেড়ে দেবেন। আমার কাছ থেকে এমন কথা শুনে জহির রায়হান সাহেব স্ক্রিপ্ট ছিঁড়ে ছুড়ে ফেললেন। ফ্যানের বাতাসে চিত্রনাট্য উড়ছে। তখন আমি বললাম, তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য এমনটা বলেছি। আমাদের প্রেম কিন্তু অন্য রকম ছিল।

কেমন তা বলবেন?
(হাসি)। আমাদের প্রেম মধুর ছিল। জহিরের মরিস অক্সফোর্ড ব্র্যান্ডের একটা গাড়ি ছিল। গাড়িটাও মিসিং হয়ে গেছে। ওই গাড়িতে আমাদের অনেক স্মৃতি। গাড়িতে করে কখনো আরিচা যাচ্ছি, কখনো কুমিল্লায় ‘দুই ভাই’ ছবির শুটিংয়ে যাচ্ছি। জহির গাড়ি চালাত, পাশের সিটে আমি বসা থাকতাম। জহিরের খুব জোরে গাড়ি চালানোর অভ্যাস ছিল। দেখা যেত, গাড়ি চলতে চলতে হঠাৎ ডানদিকে টার্ন করবে, এমনভাবে জহির গাড়ি ঘুরাত, আমি হুড়মুড় করে ওর বুকে গিয়ে পড়তাম। ওই যে হুড়মুড় করে পড়তাম, যে স্পর্শটা ছিল, ওটা ছিল অসাধারণ প্রেমের অনুভূতি।
মনে মনে কবে ভেবে নিলেন, জহির রায়হানের মতো একজন মানুষ জীবনসঙ্গী হলে ভালো হয়?
তত দিনে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করা হয়েছে। মুক্তিও পেয়েছে একাধিক ছবি। ভাবলাম, জহির যেহেতু আমাকে বোঝে, আমারও ওকে ভালো লাগে—তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা তো দেখি না। ১৯৬৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিয়ে করি। ১৯৬৬ সালে তো সুভাষ দত্তের ‘কাগজের নৌকা’ ছবি দিয়েই অভিনয়ের শুরু। প্রথমে তো বুঝিনি, পরে দেখলাম জহিরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে আমার জন্মদিনে।
জহির রায়হান পরিচালিত কতটা ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছে?
সঠিক হিসাবে মনে নেই। তবে ১৫-১৬টি ছবি তো হবেই। এসবের মধ্যে ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, ‘সুয়োরানী দুয়োরানী’, ‘দুই ভাই’, ‘কুচবরণ কন্যা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘জুলেখা’, ‘যোগ বিয়োগ’, ‘অপবাদ’ উল্লেখযোগ্য।

জহির রায়হানের সংসারে আপনার সন্তানেরা কী করছেন?
দুই সন্তানই বিবাহিত। নাতি-নাতনি নিয়ে আমি ভালো আছি। বড় ছেলে আরাফাত রায়হান অপু ব্যাংকে চাকরি করে আর ছোট ছেলে তপু রায়হান ব্যবসা করে।
জহির রায়হানের ‘বরফ গলা নদী’ নিয়ে ছবি নির্মাণের কথা বলেছিলেন …
অনেক আগেই ছবিটির পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু নানা কারণে করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ছবিটি বানাতে চাই। শরীর ঠিকঠাক থাকলে অবশ্যই ছবিটি নির্মাণ করব। আমার তো এমনও মনে হয়, ছবিটি বানাতে পারলে, আমার জীবনে কোনো আফসোস থাকত না।
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গ, গত বছর জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রের অর্ধশতক পূর্ণ হয়েছে। এ ছবি প্রসঙ্গে বলুন।
‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় দেখানো হয়েছে শিল্পের ছত্রচ্ছায়ায় পরাধীন বাংলার স্বাধীনতার ঘোষণা। জহির রায়হান এই ছবির মাধ্যমে মানুষকে জাগ্রত করেছেন। একটি দেশ, একটি সংসার, একটি চাবির গোছা, একটি আন্দোলন। নান্দনিক পোস্টারটি এখনো সবার চোখে ভাসে। ‘জীবন থেকে নেয়া’ অধিকার আদায়ের গল্প। খুব মনে পড়ে জহির রায়হান অনেক কষ্ট করে, মেধা দিয়ে, শ্রম দিয়ে রাতদিন পরিশ্রম করে সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন। জীবনের এই সময়ে এসে সিনেমার দৃশ্য ধারণের দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। এই সিনেমার একজন শিল্পী হয়ে আমি নিজেও গর্ববোধ করি। হয়তো আমি একদিন বেঁচে থাকব না। কিন্তু প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বেঁচে থাকব এমন অমর সৃষ্টি দিয়ে।