বিভিন্ন সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (এমআরপি) কাজটি পেয়েছিল মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান আইরিস করপোরেশন। সেখানে তিন কোটি পাসপোর্টের চুক্তি ছিল। গত জুনে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এমআরপি সার্ভারের ধারণক্ষমতা তিন কোটির সীমা পার হয়ে যায়। এই তিন কোটি আঙুলের ছাপ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর নতুন করে আর পাসপোর্ট ছাপা যাচ্ছিল না। ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ, লেবাননসহ অনেক দেশের বাংলাদেশ মিশন পাসপোর্ট সেবা প্রদানে সার্ভার ত্রুটির কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করে নোটিশ দেয়।
বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বেশকিছু দিন ধরে। জুনের শুরুতে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সার্ভার ডাউন হয়ে যাওয়ার কারণে প্রবাসীরা দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থেকেও নতুন পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস নোটিশ দিয়ে এমআরপি আবেদন নেওয়া বন্ধ রেখেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সার্ভার সমস্যার আপাতত সমাধান হয়েছে। ফলে নতুন করে প্রবাসীদের পাসপোর্ট প্রদান শুরু করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এদিকে প্রবাসীদের এসব ভোগান্তি রোধে ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করছে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৫ আগস্ট জার্মানিতে বাংলাদেশ মিশনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে বিদেশে এই অধ্যায় শুরু হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
সার্ভার সমস্যা ও প্রবাসীদের ভোগান্তির বিষয়ে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ডিজি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী বলেন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ব্যবস্থাকে সময়ে সময়ে আপগ্রেড করার প্রয়োজন হয়। এই সার্ভার আপগ্রেড করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার একটি সংস্থার সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে সবকিছু চূড়ান্ত করেছি। সার্ভার আপগ্রেড হওয়ার পর জমা থাকা আবেদনপত্রের ভিত্তিতে পাসপোর্ট ছাপানোও শুরু হয়েছে। আমরা একদিনও আমাদের সেবা বন্ধ রাখিনি। তিনি বলেন, এমআরপি পাসপোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। ই-পাসপোর্ট চালু করতে পারিনি বলেই এমআরপিকে বেশিদিন চালাতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালে ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করেছেন, তাই এমআরপি তো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এটা জোড়াতালি দিয়ে চালাচ্ছি। অনেক কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে ৬০ লাখ নতুন পাসপোর্ট কিনে ফেলেছি, মেইনটেন্যান্স কন্ট্রাক্টও বাড়িয়েছি।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালের মধ্যে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট চালুর লক্ষ্য ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মকর্তারা দেশের বাইরে যেতে না পারায় এটা চালু করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে ডিজি আইয়ুব চৌধুরী বলেন, এতদিনে বিদেশে আমাদের মিশনগুলোয় ই-পাসপোর্ট চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সম্ভব হয়নি। সব ঠিক থাকলে ২৫ আগস্ট জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করব।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার গোলাম সারওয়ার বলেন, এমআরপির কেন্দ্রীয় সার্ভারের ত্রুটির কারণে পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছিল। তবে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দিয়ে গেছি। মালয়েশিয়াতে বৈধকরণের কার্যক্রম চলমান ছিল। ফলে একটু সমস্যা হচ্ছিল। এখন সেই সমস্যা নেই। শেষ ছয় মাসে আমরা ২ লাখ ৯ হাজার পাসপোর্ট দিয়েছি।
মালদ্বীপে নিযুক্ত হাইকমিশনার রিয়াল অ্যাডমিরাল নাজমুল হাসান বলেন, সার্ভার ত্রুটির কারণে পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণ আপাতত বন্ধ আছে। আমাদের সার্ভারের যন্ত্রপাতি ঢাকাতে পাঠিয়েছি। দেখি কবে ঠিক হয়ে আসে। আমার এখানে দিনে গড়ে ৫০টির মতো আবেদন জমা হয়। বন্ধ থাকার কারণে পাসপোর্ট জট হবে।