বাংলাদেশ

ভূমি সচিবকে হুমকি দিলেন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা সুজন মোল্যা

ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে গত ১৭ বছরে দেশের সরকারি, বে-সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে আউট সোর্সিং, মাস্টার রোল ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বানিজ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের কোম্পানি গুলো চালিয়ে আসছে। তা বর্তমান সরকারের আট মাসেও অনেক প্রতিষ্টানের চুক্তি বাতিল করা হয়নি।
এদিকে সমগ্র দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নিমাণ (২য় পর্ব) প্রকল্পের আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের করার জন্য প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত জনবল নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়।এর পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এ দরপত্রে আহবানে সারা দিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক মনোয়ার হোসেন মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে ‘বুশরা সিকিউরিটিজ প্রা:লি:’ কোম্পানিটির পরিচালক ডাকসাইটে ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ সুজন মোল্যাকে আইটসোসিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে কাজ দেয়ার প্রস্তাব করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।তবে ভূমি উপদেষ্টার বিষয়টি নজরে নিয়ে আউট সোসিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগের পুন:দরপত্রের সকল ফাইল নিয়ে প্রকল্প পরিচালককে ডাকা হয়। কি কারণে ‘বুশরা সিকিউরিটিজ প্রা:লি:কে কাজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তা জানাতে হবে। এ জানাতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক মনোয়ার হোসেন কোনো জবাব না দিয়েই নিজে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তবদীর করে বদলী হয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনে। তবে তার জন্য একজন সচিব সুপারিশ করেছেন তিনি বিষয়টি জানতেন না বলে জানা গেছে।
দরপত্র নোটিশে বলা হয়, ভুমি মন্ত্রণালয় এর বাস্তবায়নাধীন সমগ্র দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভুমি অফিস নির্মাণ (২য়) প্রকল্প চুক্তিকালীন সময়ে সার্বক্ষনিক কাযক্রম পরিচালনার জন্য মাসিক ভিত্তিতে সাকুল্য বেতনে আউট ষোসিং পদ্ধতিতে জনবলের সেবা গ্রহণের উদ্ধেশ্য জনবল সরকরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে উক্ত দরপত্রের আহবান করা যাচ্ছে। গত ২৬/২/২৫ থেকে ১৮/৩/২৫ সকল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গ্রহল করা হবে বলা হয়। এছাড়া গত ১৯/৩/২৫ তারিখ দরপত্র খোলা তারিখ উল্লেখ করা হয়। পরে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা প্রকল্প পরিচালক মনোয়ার হোসেন করেনি। যাচাই-বাছাই তালিকায় একটি কোম্পানি নাম প্রকাশ করা হয়েছে। সে কোম্পানির নাম ‘বুশরা সিকিউরিটিজ প্রা:লি:। তার মালিক হচ্ছেন ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। সেই ‘বুশরা সিকিউরিটিজ প্রা:লি:’ কোম্পানিটির পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন নিষিদ্ধঘোষিত ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’র ঢাকা মহানগর (উত্তর)র স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ সুজন মোল্যা।

মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় ৫ আগষ্টের পর পলাতক থাকলে ও তার সকল প্রতিষ্ঠানের কাজ চালিয়ে আসছেন নিষিদ্ধঘোষিত ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা। এদিকে ভুমি মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প জনবল নিয়োগের প্রস্তাবনা ক্ষতিয়ে দেখার পরে ভুমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপদেষ্টার ‘বুশরা সিকিউরিটিজ প্রা:লি:’ কোম্পানিটির চুক্তিবাতিল করে নতুন টেন্ডারে আহবন করার প্রস্তাব অনুমোদন দেন। এ ঘটনা জানা জানি হলে নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’র ঢাকা মহানগর (উত্তর)র স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং ‘বুশরা সিকিউরিটিজ প্রা:লি: কোম্পানিটির পরিচালক ডাকসাইটে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ সুজন মোল্যা সম্প্রতি সচিবালয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ভুমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সাথে দেখা করেন। এক পর্যায়ে কথা বলতে বলতে ছাত্রলীহগ নেতা মোহাম্মদ সুজন মোল্যা কি কারণে কাজ বাতিল করা হয়েছে তার কারণ জানতে চান। ভুমি সচিব এ বিষয়ে কথা বলতে না চাইলে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ সুজন মোল্যা। পরে অন্যান্য কর্মকতারা এসে মোহাম্মদ সুজন মোল্যা নেতাকে রুম থেকে বের করে দেন। পরে এ ঘটনায় সচিবালয়ের নিরপত্তা বাহিনীকে অবগত করা হয়। এবিষয় নিয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হচ্ছে বলে ভুমি সচিব জানিয়েছেন। প্রকল্পটি গত ২০১৬ সালে শুরু হয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৭৩১৮৬ লাখ টাকা। গত থেকে ফ্যাসিষ্ট সরকারের নেতারা এক প্রকল্পে জনবল নিয়োগ দিয়ে আসছিলো। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনো ভাবতে শুরু করেনি বলে জানা গেছে।
এ ঘটনা সমগ্র দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নিমাণ (২য় পর্ব) প্রকল্পের আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের করার জন্য প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতি ক্ষতিয়ে দেখার নিদেশনা দিয়েছেন ভুমি উপদেষ্টা।
মেডিক্যাল কলেজটির সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া ‘বুশরা সিকিউরিটিজ প্রা:লি:’ কোম্পানিটির পরিচালক ডাকসাইটে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ সুজন মোল্যা। নিষিদ্ধঘোষিত ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’র ঢাকা মহানগর (উত্তর)র স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক তিনি। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যায় অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্বও দিয়েছেন।
পট পরিবর্তনের পর তিনি ‘খাঁটি ব্যবসায়ী’ বনে মিশে যান সাধারণ মানুষের সঙ্গে। পক্ষান্তরে, বাছাই হওয়া ৫ প্রতিষ্ঠানের একটি ‘মাছরাঙা সিকিউরিটিজ প্রা:লি:’। এটির মালিক শেখ ইবাদুল হক রুবায়েদ। তিনি জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের অগ্রসৈনিক। জীবন বাজি রেখে সশরীরে তিনি আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ১২৩টি মামলার আসামি রুবায়েদ। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্তৃক বহুবার হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকবার। চার বছর ১১ দিন তিনি কারাগারে ছিলেন। গুমের শিকার হয়েছেন ২ বার।
অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া ব্যবসায়ী না পেয়ে কি করে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হলো জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: শফিউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, কে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা সেটি দেখার সুযোগ আমার নেই। টেন্ডারে কারিগরি কমিটি ছিলো। আমি কমিটির সুপারিশের ওপর স্বাক্ষর করেছি মাত্র। পিপিআর মেনে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে টেন্ডার করা হয়েছে। চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। আপনি আসুন, রেকর্ডপত্র দেখুন! ১৪-১৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সবাই কাজ পায়নি। তাদের ক্ষোভ থাকতে পারে। অনেক কথা থাকতে পারে। সেগুলোতো আমি অফিসিয়ালি কাউন্ট করতে পারি না। ‘সংবিধান লংঘন ও আদালত অবমাননা রোধে চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনঃবহালের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুরক্ষায়’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সংগঠনের নেতারা। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতার প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের কাজ। ২০১৯ সালে প্রণীত ‘সেবা গ্রহণ’ নীতিমালার আওতায় এরই মধ্যে জনবল সরবরাহে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে চুক্তি বা নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (নোয়া)। সব ঠিকঠাক থাকলে যেকোনো দিন স্বাক্ষর হবে কার্যাদেশ। গত ২ অক্টোবর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগযোগ্য ১৯ ক্যাটাগরির ২৫৭ জনবল ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত হাসপাতালে সেবা দেবে। সিদ্ধান্ত মতো গত ৩ সেপ্টেম্বর অনলাইনে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে বুশরা সিকিউরিটিজ, মাছরাঙা সিকিউরিটিজসহ ১৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। শর্তাবলি যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠান ‘অযোগ্য’ বিবেচিত হয়।
এবিষয়ে সমগ্র দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নিমাণ (২য় পর্ব) প্রকল্পের আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের করার জন্য প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার হোসেনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেনি।

সম্পর্কিত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button