হেফাজতে ইসলামের ডাকা আগামীকাল রোববারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে নৈতিক সমর্থন থাকবে বিএনপির। সেই সঙ্গে দলটির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুব, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্র সংগঠন আগামীকাল সারা দেশে বিক্ষোভ করবে।
এছাড়াও আগামী সোম ও পরের দিন মঙ্গলবার দুদিন বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিএনপি। আজ শনিবার বিকেল তিনটায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নিজ নিজ বাসা থেকে অংশ নেন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, হেফাজতের ডাকা রোববারের হরতালে সরাসরি সমর্থনের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আসে। এই অবস্থায় মাঝামাঝি অবস্থানে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রা²বাড়িয়ার হতাহতের ঘটনায় গতকাল শুক্রবার তাৎক্ষণিক স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল জরুরি বৈঠকে বসেন তারেক রহমান। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ শনিবার বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে।
আজ স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাধীনতার দিবসে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে মানুষ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ আগামী ২৯ মার্চ ঢাকাসহ সকল মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং ৩০ মার্চ জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল অথবা সমাবেশের কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করছি।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসের দিনে দেশে বিভিন্ন স্থানে মানুষ হত্যা ও পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সারাদেশে বিক্ষোভ করবে।’
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে-এই কর্মসূচির প্রতি বিএনপির সমর্থন আছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভ মিছিল করছি স্বাধীনতা দিবসের দিনে মানুষকে হত্যা করার প্রতিবাদে। প্রত্যেকটা সংগঠন ও নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিবাদ বা তার মত প্রকাশ করবার। সেই মত প্রকাশ করায় যখন গুলি করা হয়েছে আমরা সেইটার প্রতিবাদ করছি, আমরা এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
তিনি বলেন,‘ তারা যদি কোনো কর্মসূচি দেয় বা হরতাল আহবান করে সেটা যৌক্তিক তো বটেই। সরকার যদি তাকে প্রতিহত করবার বা বন্ধ করবার অগণতান্ত্রিক অথবা হঠকারী হুমকি দেয়- সেটা হবে একেবারেই হঠকারী ব্যবস্থা। এখানে কোনো অবাঞ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশে নির্বিচার লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণ এবং একই সঙ্গে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর আক্রমনের প্রতিবাদে যে রক্ত ঝড়েছে বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায়-এটা নিঃসন্দেহে ৫০ বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এটা নজিরবিহীন ঘটনা। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ ইতিমধ্যে জানিয়েছি।’
এই ঘটনার প্রতিবাদে যুবদল স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কর্মীরা আজ শনিবারও বিক্ষোভ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে পুলিশি হামলা ও গ্রেপ্তারের মুখে পড়েছে। হবিগঞ্জে মনজুরুল কিবরিয়া, আদনান ফারহাদ, গাজীপুরে শামীম মিসির, মাসুদ মোল্লা, বেলায়েত হোসেন, মানিকগঞ্জের রাকিব হোসেন, ফরিদপুরে ইলিয়াস হোসেন, মুরাদ আহমেদ, হেমায়েত উল্লাহসহ বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। হবিগঞ্জে পুলিশি হামলায় গুলিবিদ্ধ জহিরুল হক শরীফসহ বিভিন্ন স্থানে আহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।