সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার এক নারী ৬ মাস বয়সী শিশু সন্তান’সহ দেশে ফিরেছেন। সন্তানের বাবার পরিচয় কী দেবেন এই লজ্জায় শিশুটিকে দত্তক দিতে চান তিনি। আপাতত ব্র্যাকের তত্ত্বাবধানে থাকলেও সামাজিকতার লজ্জায় প্রহর কাটছে তার।
সন্তান জন্মের আগে-পরে ভয়াবহ সেই নির্যাতন ও কষ্ট হার মানায় সিনেমার গল্পকেও। পৃথিবীকে বোঝার আগেই দুনিয়ার নিষ্ঠুরতার শিকার শিশুটি। অবুঝ কান্নার শব্দে শিশুটি কাকে যেন ধিক্কার দিচ্ছে। পিতার পরিচয় দেয়নি জন্মদাতা বাবা। সামাজিকতার ভয়ে মা’ও পড়েছেন অকুল পাথারে।
জীবন বদলাতে দুই বছর আগে সৌদি আরব যান ওই নারী। ভেবেছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে, আসবে জীবনে সচ্ছলতা। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। ভয়াবহ নির্যাতনে জন্ম নেয় এক শিশুর। এখন এ জীবন থেকেই পালিয়ে বেড়াতে চান ওই মা। নারী ছেড়া ধনকে যে তুলে দিতে হবে অন্যের কোলে!
ওই নারী বলেন, বিদেশ থেকে যদি একটা বাচ্চা নিয়ে আসি তাইলে মানুষ কী বলবে? বলবে স্বামী নেই তাহলে বাচ্চা আসলো কীভাবে। আমি চাচ্ছি বাচ্চাটা কাউকে দিতে। দিলে অনেক দিক দিয়ে সুবিধা হবে। যত্নের দিক দিয়েও অনেক সুবিধা পাবে বাচ্চাটা।
তিনি আরও জানান, বাড়ির মালিকের বড় ছেলে আমার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিতো। তারপর আমার গলায় ছুরি ধরে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমাকে নির্যাতন করতো। মাঝে মাঝে বাথরুমে আটকে রেখেও আমাকে নির্যাতন করতো। একপর্যায়ে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে যৌন নির্যাতনের সাথে সাথে ওরা শারীরিক নির্যাতন চালাতো। বাচ্চা যেনো নষ্ট হয় যায় এই জন্য তল পেটে লাথি দিতো, ভারি কাজ করতে দিতো।
বিদেশ জীবনের কাজের শুরু থেকেই তিক্ত অভিজ্ঞতা তার। শত চেষ্টাও সম্ভ্রম আগলে রাখা সম্ভব হয়নি। গৃহকর্তার বড় ছেলের নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে মিথ্যা অভিযোগে পাঠানো হয় স্থানীয় জেলে। সেই জেলেই তিন মাস পর জন্ম হয় ফুটফুটে ছেলে সন্তানের। নানা চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে দেশে ফিরলেও এখনও এক দণ্ড শান্তি নেই মায়ের চোখে।
বেসরকারি সংস্থা ব্রাক এগিয়ে এসেছে ওই নারীর সহযোগিতায়। নির্যাতনের শিকার হলেও রিক্রুটিং এজেন্সি আলবি ইন্টারন্যাশনাল কোনো খোঁজ নেয়নি। এই নারী তাদের মাধ্যমে যায়নি বলেও অস্বীকার করেন এর স্বত্বাধিকারী।
এদিকে, সৌদি আরবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে নারী কর্মীদের ফেরত আসার হার আগের তুলনায় বেড়েছে অনেক। লোক লজ্জার ভয়ে এয়ারপোর্টে সন্তান ফেলে যাওয়ার ঘটনাও আছে।