ই-পাসপোর্টের (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট) স্বল্পতার কারণে জরুরি ভিত্তিতে ৪০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কিনতে যাচ্ছে সরকার। লেমিনেশন ফয়েলসহ এই পাসপোর্ট কিনতে ব্যয় হবে ৯৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির কারণে এই এমআরপি কিনতে কোনো টেন্ডার আহ্বানের প্রয়োজন পড়ছে না। সরকারের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের জন্য ৪০ লাখ পাসপোর্ট সরবরাহ করবে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচআইডি সিআইডি লিমিটেড।
আজ বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জানা গেছে, গত বছরের (২০২০ সাল) ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট চালু হলেও দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ই-পাসপোর্টের সরবরাহ নেই। ফলে বিদেশে বাংলাদেশী মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট চালু করতে দেরি হওয়ায় এমআরপির চাহিদা বেড়েছে। যেসব দেশে (সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া) প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা বেশি সেসব দেশে ২০১৫ সালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদি এমআরপি প্রদান করা হয়েছিল। বর্তমানে ওই সময়ে ইস্যু করা পাসপোর্টগুলোর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় অনেকেই বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করছেন। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী কোভিডের কারণে সব মিশনে ই-পাসপোর্ট চালুর শিডিউল বারবার পরিবর্তিত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য এমআরপি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হচ্ছে।
এই সংক্রান্ত এক ক্রয় প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে দৈনিক গড়ে ২০ হাজার পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে দেশে প্রায় ১১ হাজার এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে প্রায় ৯ হাজার। এর বিপরীতে দেশে দৈনিক গড়ে ৭ হাজার এবং বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে দৈনিক গড়ে ছয় হাজার এমআরপি বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে অপেক্ষমাণ আবেদনকারীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।
বর্তমানে পাসপোর্ট অফিসের পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে (প্রিন্টিং শাখা) গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে পেন্ডিং পাসপোর্টের আবেদনের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৭৬১টি এবং বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮০৩টি। এছাড়া প্রায় চার লাখ আবেদন জমা আছে, যেগুলো ইতোমধ্যেই প্রিন্টিংয়ের উপযোগী হয়েছে। বর্তমানে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের ওয়্যারহাউজে মজুদ পাসপোর্ট বুকলেট চার লাখ ৬৭ হাজার ৯৯১টি এবং লেমিনেশন ফয়েল আছে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার। এর দ্বারা শুধু পেন্ডিং আবেদনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হতে পারে।
ক্রয় প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিটি পাসপোর্ট বুকলেটের একক দর ১.৫৯ ডলার হিসাবে ৪০ লাখ এমআরপির মূল্য ৬৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং প্রতিটি লেমিনেশন ফয়েলের একক দর ১.১৪ ডলার হিসাবে ৪০ লাখ লেমিলেশন ফয়েলের মূল্য ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এছাড়া ফয়েলসহ ৪০ লাখ এমআরপি পাসপোর্টের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে আকাশ পথে ফয়েলসহ ১ লাখ ২০ হাজার এমআরপি আনা হবে। সে জন্য বুকলেট প্রতি ০.৩৬২৯ ডলার হিসাবে ব্যয় হবে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮০ ডলার। সব মিলিয়ে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৮০ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯৬ কোটি ২৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি আজ এই প্রস্তাব অনুমোদন করলে দ্রুত এমআরপিগুলো সংগ্রহের কাজ শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়।